লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
ইঞ্জিন ও কোচ ঘুরানোর জন্য লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগে নির্মিত টার্ন টেবিলটি পরিত্যক্ত হওয়ায় প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে উল্টোদিকেই ট্রেন চালাতে হয়েছে চালকদের। এছাড়া চাকার ক্ষয় এবং চালককে ইঞ্জিনের পিছনে বসে ট্রেন চালাতে হচ্ছে।
তবে দীর্ঘদিন পর লালমনিরহাট রেলওয়ে যন্ত্র প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে নতুন করে আবারও টার্নটেবিলটি নির্মাণ হয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে ১৮৬২ সালে লালমনিরহাটে প্রথম নির্মিত হয় টার্ণটেবিল। যা পরবর্তী দীর্ঘ সময় সচল ছিল। রেলের ইঞ্জিন ও কোচ ঘুরানোর জন্য লালমনিরহাটের ওই টার্ন টেবিলটি ১৯৯৩ সালের দিকে নষ্ট হয়ে যায়। কালের গর্ভে যা এখন বিলীন। বৃটিশরা এটির নকশা ও নির্মাণ কৌশল সরিয়ে ফেলায় বাংলাদেশে আর কোন টার্ন টেবিল নির্মিত হয়নি। টার্ন টেবিল না থাকায় ইঞ্জিন না ঘুরিয়ে উল্টোভাবে ট্রেন চালানো হচ্ছে।ফলে চালক ইঞ্জিনের পিছনের দিকে বসায় আঁকাবাঁকা রেললাইনে চালকদের দেখতে অসুবিধা হয় এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। তাছাড়াও একদিকে চলাচলের কারণে ঘর্ষণে ক্ষয় হচ্ছে চাকাগুলো। এতে বাড়ছে ট্রেন লাইন থেকে পড়ে যাওয়ার দুর্ঘটনা। তাই এ সমস্যা সমাধানে দেশের এই প্রথম লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগ নিজ প্রযুক্তিতে স্বল্প খরচে রেলের অব্যবহৃত যন্ত্রাংশ দিয়ে নির্মান করেছে টার্ন টেবিল। এখন শুধু রেললাইন সংযোগের অপেক্ষা। এটি চালু হলে দেশের মধ্যে হবে এটিই প্রথম নির্মিত টার্ন টেবিল। লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগ থেকে প্রতিদিন ১১টি ট্রেন ঢাকা, টাঙ্গাইল,গাইবান্ধা, বোনারপাড়া, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর সহ ২৮টি রেল স্টেশনে চলাচল করছে। এটি চালু হলে ইঞ্জিন সোজাভাবে চলবে। এতে চালকদের সুবিধার পাশাপাশি চাকার ক্ষয়রোধ হবে।
ট্রেনচালক জহুরুল ইসলাম জানান, ইঞ্জিন ঘোরানোর ব্যবস্থা না থাকায় ওল্টোভাবেই ট্রেন চালাতে হয়। এতে অনেক সময় বাঁকা রেললাইনে সিগন্যাল চোখে পড়েনা। আর ইঞ্জিন ঘুরিয়ে সামনের দিকে চালক থাকলে গাড়ি চালাতে সুবিধা হয়। এ টার্ন টেবিল নির্মাণের ফলে এ সমস্যার সমাধান হলো।
এ টার্ন টেবিল তৈরির উদ্যোক্তা লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী ( ক্যারেজ এন্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামান বাবু বলেন, দেশে এই প্রথম দেশীয়
যন্ত্রাংশ দিয়ে টার্ন টেবিলটি নির্মাণ করা হয়েছে।এর মাধ্যমে ইঞ্জিন ও কোচ সহজেই ঘোরানো যাবে। স্বল্প ব্যয়ে আর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ টার্ন টেবিলটি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে যেমন চাকার ক্ষয়রোধ হবে তেমন চালককে আর পেছনে বসে ট্রেন চালাতে হবেনা। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে যাবে। রেলভ্রমন হবে আরো গতিশীল ও নিরাপদ।